বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
এক নপুংসক বাদশার তিন স্ত্রী ছিল। দরবেশের দেওয়া আনার খেয়ে সবারই সন্তান হলো। সন্তানরা যখন বড় হলো বাদশা অন্ধ হয়ে গেল। পর্বতবাসী অভিজ্ঞ এক বুড়ো বললো এর ওষুধ হলো ‘পরীদের রানীর ঘোড়ার দুধ’। ছেলেরা শুনতে পেয়ে যার যার মতো রওনা হলো। ছোট এবং হালকা গড়নের ছেলেটা দুর্বল একটা ঘোড়া পেল। তাতেই চড়ে সে অগ্রসর হয়ে গেল।
যেতে যেতে গিয়ে উঠলো এক তেমুহনীতে। সেখানে লেখা ছিল একটি রাস্তা বেশ দূরের তবে নিরাপদ আর অপর পথটি হলো কাছের কিন্তু বিপদ-সঙ্কুল। বাদশার অন্য দুই ছেলে নিরাপদ পথ বেছে নিলো আর দুর্বল ছেলে বেছে নিলো বিপদপূর্ণ কাছের পথ। যাবার সময় সবাই একটি তলোয়ার পুঁতে রাখলো মাটির নীচে। বলা হলো যে আগে পৌঁছবে সে এই তলোয়ার নিয়ে যাবে। দুর্বল ছেলেটা বিপদের পথে অগ্রসর হয়ে পৌঁছলো এক গুহায়। সেখানে এক বুড়ির সাথে পরিচিত হলো। সেই বুড়ি বললো: আমি ওই পরীদের রানীর ধাইমা। পরীদের রানী এখন রূপকথার পাহাড়ে গেছে। বুড়ি ছেলের নিয়ত জেনে সিদ্ধান্ত নিলো তাকে সাহায্য করবে। বুড়ি বলেছিল: ‘একটিমাত্র পথ আছে সেখানে যাবার’।
বুড়ি সেই পথটির কথা বললো এভাবে: ‘এখানে কাছেই একটি ঝরনা আছে। প্রতিদিন সেখানে এক পাল ঘোড়া আসে। ঘোড়াগুলো এক এক করে ওই ঝর্ণাধারা থেকে পানি খায়। সবশেষে ঘোড়াটি বেশ দুর্বল এবং শুকনো। তুমি ওই ঘোড়াটিকে আটক করবে। যখন ওই ঘোড়া বাছুর দেবে এবং বড়ো হবে তখন তার পিঠে চড়বে। ওই ঘোড়ার পিঠে চড়েই তুমি যাবে রূপকথার পর্বতে। এছাড়া তুমি এইসব ঘোড়ায় চড়ে কোনোভাবেই ওই পাহাড়ে যেতে পারবে না’।
ছেলে দেখলো এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। সুতরাং কী আর করা! শেষ পর্যন্ত সে একাজ করতে রাজি হয়ে গেল। বুড়ি যখন দেখলো যে ছেলে রাজি, তাকে ঘোড়ার একটা লাগাম দিয়ে বললো: ‘এটা ওই ঘোড়ারই লাগাম। যেভাবেই হোক ওর মুখে এই লাগাম লাগাতে হবে’।
বুড়ি আরও বললো: ‘এখন থেকে চল্লিশ দিন পর ঘোড়ার বাচ্চা হবে। বাচ্চাটার খুব যত্ন নেবে। এই বাচ্চা দৈনিক এক বছরের সমান বড়ো হবে। সাতদিনের মাথায় তুমি ওই ঘোড়ায় চড়বে। ওই ঘোড়ার বাঁ কান মোচড়ালে ঘোড়া শূন্যে উড়বে আর ডান কান মোচড়ালে মাটিতে নেমে আসবে। পরীদের রানী চল্লিশ দিন ঘুমায় আর চল্লিশ দিন জেগে থাকে। এখন সে জেগে আছে। তুমি গিয়ে পৌঁছবে যখন তখন সে ঘুমে থাকবে। আর তুমি সহজেই তার ঘোড়া নিয়ে দুধ দুইতে পারবে এবং তোমার বাবার চোখে মাখতে পারবে। তবে সাবধান! পরীদের রানী যখন জাগবে, তোমার খোঁজে আসবে, তখন কী হবে জানি না’।
রূপকথার পাহাড়ে যাবার পুরো পথের ঠিকানা এবং যা যা করণীয় সবকিছুই বুড়ি ছেলেকে বলে দিলো। তারপর তিনটি আনার আর একটা আয়না দিয়ে বললো: ‘এগুলো রাখো! কাজে আসবে’। বাদশার ছেলে ওই রাতটা বুড়ির গুহাতেই কাটালো। সকালে গেল ঝরনার কাছে। বুড়ির কথামতো ওই ঘোড়াটিকে আটকালো এবং গুহায় নিয়ে গেল। চল্লিশ দিন ঘোড়ার ভালো করে যত্নআত্তি করলো। যথাসময়ে তার বাচ্চাও হলো। সাতদিনেই বুড়ির কথামতো বাচ্চা ঘোড়াটি সাত বছরের ঘোড়ার মতো হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠলো। সপ্তম দিনে শাহজাদা ঘোড়ার পিঠে চড়লো এবং বাঁ কান মোচড়াতেই ঘোড়া শূন্যে উড়তে শুরু করলো। উড়তে উড়তে ঘোড়া গিয়ে পৌঁছে গেল সেই রূপকথার পাহাড়ে। শাহজাদা ঘোড়ার ডান কান মোচড়াতেই সে পাহাড়ের ওপর একটা দুর্গের কাছে মাটিতে নেমে গেল।
শাহজাদার মনে বিন্দুমাত্র ভয়-ডর নেই। সে সোজা চলে গেল কেল্লার ভেতর। কেল্লা বটে। দেখামাত্রই যে-কেউ বেহুশ হয়ে পড়ার কথা। কিন্তু শাহজাদা নির্বিঘ্নে কেল্লার ভেতরের সবকিছু দেখতে দেখতে গিয়ে পৌঁছলো এক ঝরনার কাছে। অপেক্ষা করতে করতে একসময় পরীদের রানীর মাদি ঘোড়া এসে পৌঁছলো। বুড়ির কথামতো শাহজাদা আয়নাটা ওই ঘোড়ার সামনে ধরলো। আয়নার ভেতর নিজেদের দেখতে পেয়ে ঘোড়া বলে উঠলো: বাহ বাহ! কী সুন্দর আমি। একটা জিন আর লাগাম যদি পরতে পারতাম তাহলে তো আরও সুন্দর লাগতো। শাহজাদা সাথে সাথে বুড়ির দেওয়া জিন আর লাগাম বের করে ঘোড়ার পিঠে আর মুখে পরিয়ে দিলো। এবার ঘোড়া বললো: ‘যদি একজন সওয়ার এখন আমার পিঠের জিনে বসতো’। শাহজাদা দেরি না করে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলো এবং চলতে শুরু করলো। ঘোড়া এমনভাবে দৌড়তে লাগলো যে বোঝা গেল কেমন পাগলাঘোড়া সে।
শাহজাদা ওই পাগলাঘোড়ার সামনে খানিক দূরত্বে একটা আনার ছুঁড়ে মেরে বললো: ‘আমি মানব। তুমি যদি আবারো এরকম পাগলামো করো তাহলে এই আনারের মতো করে তোমার মগজ বের করে আনবো’। কিছুক্ষণ ভালোই দৌড়লো ঘোড়া। কিন্তু ধীরে ধীরে আবারও সে পাগলামো শুরু করে দিলো। এবার শাহজাদা দ্বিতীয় আনারটা ছুঁড়ে মারলো তার সামনে। ঘোড়া এবারও কিছুটা দমলো তবে বেশিক্ষণ না। কিছুক্ষণ পরেই পুনরায় সে পাগলামো শুরু করলো। শাহজাদা তৃতীয় আনারটাও ছুঁড়ে মারলো। ঘোড়া এইবার লাইনে আসলো। যেতে যেতে ঘোড়া গিয়ে পৌঁছলো পরীদের রানীর কেল্লায়। শাহজাদা মনে মনে বললো: ‘রূপকথার পাহাড়ে যেহেতু এসেই পড়েছি তাহলে পরীদের রানীকে একবার দেখে গেলে মন্দ হয় না। প্রতিদিন তো আর এখানে আসা হবে না! আমার বাবার প্রাসাদ তো নয়’।
সে ঠিকই গেল। দেখলো পরীদের রানী ঘুমোচ্ছে। কিন্তু পরীদের রানীর ওপর শাহজাদার নজর পড়তেই থ’ মেরে গেল সে। মনে মনে বললো: ‘কেউ এরকম সুন্দর হতে পারে! আশ্চর্য’!
এরপর ঘোড়ায় চড়ে বসলো। যেভাবে বুড়ি তাকে নির্দেশনা দিয়েছিল সেভাবেই সে ফিরে গেল। যেতে যেতে যখন ওই সেই তেমুহনীতে পৌঁছলো-যেখান থেকে ভাইদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল সে-মাটি খুঁড়ে দেখলো তলোয়ারটা সেখানেই পড়ে আছে, যেমন রেখে গিয়েছিল। তার মানে বোঝা গেল তার ভাইয়েরা এখনো ফেরে নি। শাহজাদা একাকি ফিরতে চায় নি বলে পায়ে হেঁটে রওনা হলো। যে পথে ভাইয়েরা গিয়েছিল, সে পথে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Jaber
Guest ৭ বছর, ৩ মাস পুর্বেJaber
Guest ৭ বছর, ৩ মাস পুর্বে